গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনই বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এত বিপুল সংখ্যক শিশুদের চিকিৎসার জন্য অন্তত ১০টি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন।
গাজায় ভয়াবহ ক্ষুধা সংকট: অপুষ্টিতে ভুগছে ৩ লক্ষাধিক শিশু





গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, শুধু শিশু নয়—যেসব আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তারাও অপুষ্টির কারণে ভুগছেন। তাঁর মতে, অপুষ্টি এখন গাজার অন্যতম বড় সংকটে পরিণত হয়েছে এবং এটি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু হাসপাতালের পরিচালক আহমদ আল-ফারা বলেন, আমাদের হাসপাতালে ভর্তি ১২০ জন শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার। যারা এই অবস্থায় বেড়ে উঠছে, তাদের পুরো জীবনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে আরও ৮ শিশু মারা গেছে। ইসরায়েলের অবরোধ ও চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২৮১ জন অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১১৪ জন।
আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষণ সংস্থা আইপিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী মাসের মধ্যে দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস অঞ্চলেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ পরিস্থিতিকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় এবং মানবতার ব্যর্থতা বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এটিকে ইসরায়েল সরকারের কর্মকাণ্ডের সরাসরি ফলাফল বলে উল্লেখ করেছেন।
মিসর সীমান্তে কয়েক মাস ধরে হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষায় থাকলেও, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। মে মাস থেকে কিছু ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই বাধার কারণেই গাজায় ভয়াবহ খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। গতকাল ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় আরও ৭১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজারের বেশি।
সব মিলিয়ে গাজায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি, আর পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন অন্তত এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।