মাছ, মাংস, ডিম–সবজির দাম বেড়ে আকাশছোঁয়া: সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ‘খাব কী?’

মোট দেখেছে : 81
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি সবজির দামে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। সীমিত আয়ের মানুষের প্রশ্ন—“মাছ কিনতে পারছি না, মাংস কিনতে পারছি না, ডিম কিনতে পারছি না, সবজিও কিনতে পারছি না, তাহলে খাব কী?”

সবজির দামে অস্থিরতা

সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে এবার অধিকাংশ সবজির দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

  • পটোল: ৬০–৮০ টাকা কেজি, যা গত বছরের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি।

  • বেগুন, ঢ্যাঁড়স, করলা, কচুপাতা, ঝিঙে, লাউসহ অন্তত ১৪ ধরনের সবজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

  • কেবল কাঁচা পেঁপে (২০–৩০ টাকা)মিষ্টিকুমড়া (৪০–৫০ টাকা) কিছুটা সাশ্রয়ী।

  • আলুর দাম গতবারের তুলনায় কমে ২০–২৫ টাকা কেজি হয়েছে, তবে এতে কৃষক লোকসানের মুখে পড়েছেন।

মাছ-মাংসের দাম

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে—

  • রুই, কাতলা, ইলিশ, পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের দাম গড়ে ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

  • আধা কেজি ইলিশ কিনতে গ্রাহকদের দিতে হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৪০০ টাকার মতো।

  • মুরগির দাম বেড়েছে, ডিমের দামও অস্থির।

  • গরুর মাংসের দাম আগের মতোই চড়া, ছাগলের মাংসের দাম সামান্য বেড়েছে।

দাম বাড়ার কারণ

সবজি ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় কয়েকটি মূল কারণ—

  1. বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় অনেক খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে সরবরাহ কমেছে।

  2. পরিবহন খরচ বেড়েছে এবং সড়ক অবকাঠামো খারাপ থাকায় পণ্য আনা-নেওয়ায় ব্যয় বাড়ছে।

  3. বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

  4. পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে একাধিক হাতবদলের ফলে দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, কারওয়ান বাজারে রাতে এক কেজি সাদা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, কিন্তু সকালেই সেই একই বেগুন খুচরায় বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।

বিশেষজ্ঞদের মত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষার মৌসুমে সবজির দামে সাময়িক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হলেও এবার তা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান মনে করেন, শুধু সাময়িক পদক্ষেপ নয়, দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ ছাড়া মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তার মতে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।