আজ শুভ মহালয়া, দেবীপক্ষের শুরু

মোট দেখেছে : 145
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

আজ ২১ সেপ্টেম্বর, শুভ মহালয়া। এই দিন থেকেই শুরু হলো দেবীপক্ষ—শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহালয়া এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। প্রতিবছর মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটে ‘তর্পণ’-এর মাধ্যমে পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এদিন দেবী দুর্গার আবাহন মন্ত্র ধ্বনিত হয়, শোনা যায় মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডীপাঠ। মূলত এই দিন থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শারদীয় দুর্গাপূজার আগমনী সুরে মেতে ওঠেন।

মহালয়ার মাহাত্ম্য

‘মহালয়া’ শব্দের অর্থ মহৎ আলয় বা মহান আবির্ভাব। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে মা দুর্গা কৈলাস থেকে ধরণীতে আগমন শুরু করেন। দেবীপক্ষের সূচনার মাধ্যমে আনন্দ আর ভক্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয় সর্বত্র।

কী হয় মহালয়ার দিনে

ভোরবেলায় গঙ্গা ও অন্যান্য নদীর ঘাটে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।

রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয় দেবী দুর্গার আবাহন—“যশোদা নন্দন” বা মহিষাসুরমর্দিনীর অমর বাণী।

মন্দির, বাড়ি ও আশ্রমে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ।

মানুষ শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আজ মহালয়া পালিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে। ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে বিশেষ পূজা-অর্চনা ও তর্পণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দেবীর আগমন ও গমন

পুরাণ মতে, দেবী দুর্গা বিভিন্ন বাহনে আগমন ও গমন করেন। এবার দেবী দুর্গার আসার বাহন হবে গজে (হাতি), যা শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর বিদায় হবে দোলায় (পালকি), যা অশুভ লক্ষণ হিসেবে পরিচিত।

প্রতিমা, রঙ ও ঘট বসানো

প্রতিমা নির্মাণে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কুমোরপাড়ার শিল্পীরা। বাঁশ, কাঠ ও মাটির কাঠামোর ওপর প্রতিমার সাজসজ্জা চলছে পুরোদমে। মহালয়ার দিন থেকেই প্রতিমার চোখ আঁকার কাজ—যা “চোখ দান” নামে পরিচিত—শুরু হয়। এ বছরও দেবী দুর্গার প্রতিমায় প্রাধান্য পাচ্ছে লাল, সাদা ও সোনালী রঙ।

ঘট বসানো হবে ষষ্ঠীর দিন, যা দেবীপক্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে গণ্য। মণ্ডপ সাজানোতে এবারও থিমভিত্তিক সজ্জার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।

দুর্গাপূজার দিনক্ষণ

দেবীপক্ষ শুরু হলো মহালয়া দিয়ে। এরপর একে একে পালিত হবে দুর্গাপূজার পাঁচ দিনব্যাপী মহোৎসব।

মহা পঞ্চমী: ২৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার

মহা ষষ্ঠী: ২৮ সেপ্টেম্বর, রবিবার – দেবীর বোধন, ঘট বসানো ও প্রতিমা উন্মোচন

মহা সপ্তমী: ২৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার – কলাবউ স্নান ও পূজার সূচনা

মহা অষ্টমী: ৩০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার – কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা

মহা নবমী: ১ অক্টোবর, বুধবার – দেবীর চূড়ান্ত আরাধনা

বিজয়া দশমী: ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার – দেবী বিসর্জন ও সিন্দুর খেলা

মহালয়া শুধু দুর্গাপূজার সূচনা নয়, বরং এটি পিতৃপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভক্তির প্রতীক। দেবীপক্ষের এই আগমনী বার্তা হিন্দু সমাজে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়, সবার মনে আনে ভক্তি ও উৎসবের আমেজ।